`চিকিৎসকের উপর আস্থা রাখতে হবে’
ডা. মাহবুবুর রহমান:
গতকাল রাত ৯ টা। চেম্বারে রোগী দেখছি । জরুরী বিভাগের মেডিকেল অফিসার বললেন , হার্ট এ্যাটাকের রোগী এসেছেন, ৫ ঘন্টা ধরে বুকে ব্যথা। আমি তাড়াতাড়ি রোগী সিসিইউতে পাঠাতে বললাম। চেম্বারে রোগীর চাপ, তা সত্বেও দ্রুত সিসিইউ তে গেলাম। বড় এ্যাটাক, প্রেসার কমের দিকে। আমি রোগীর পরিবারের লোকজনকে বললাম, খারাপ এ্যাটাক , দ্রুত চিকিৎসা শুরু করতে হবে।
তাঁদেরকে জানালাম, হার্টের একটি মেজর রক্তনালী বন্ধ হয়ে গেছে, ওটা খুলে দিতে হবে।
তাঁদের চোখেমুখে অবিশ্বাসের ছাপ।
আমি আবার ব্যাখ্যা করলাম। লাভ হল না। এরপর শুরু হল F&F !
বিভিন্ন লোকের সাথে ফোনালাপ। আমাকেও ধরিয়ে দিলেন তাঁদের আত্মীয় এক ডাক্তারকে। আমি যথাসাধ্য তাঁকেও বুঝালাম।
হার্টের মেজর একটি রক্তনালী বন্ধ। হার্টের মাংসপেশী দ্রুত ধ্বংস হচ্ছে । প্রতি মিনিটে শত শত মাংসপেশীর মৃত্যু হচ্ছে !
কিন্তু অবিশ্বাসের কালোমেঘ কাটছে না। রোগীর লোকজনকে শিক্ষিত এবং সচ্ছল মনে হচ্ছে।
আমি তাঁদের বললাম যে, বন্ধ নালী খুলবার দুটো পদ্ধতি আছে: ১। এখনই এ্যানজিওগ্রাম করে ব্লক ছুটিয়ে একটা রিং পরিয়ে দেয়া। এটাই হার্ট এ্যাটাকের সর্বোত্তম পদ্ধতি। সাফল্যের হার ৯৫% ।
২। ব্লক গলিয়ে দিতে সক্ষম একটি ইনজেকশন ( Sreptokinase) দিয়ে ব্লক খোলার চেষ্টা করা। গত আশির দশক থেকে সারা বিশ্বে এটা চালু হয়েছে। সাফল্যের হার ৬৭% ।
সবকিছু বলা সত্বেও কোন লাভ হল না। রোগী বা পরিবার কোনটাই নিবেন না।
আমার চেম্বারে দূরদুরান্ত থেকে রোগীরা অপেক্ষা করছেন। তাঁরা আমার উপর বিরক্ত হচ্ছেন । আমি চেম্বারে ফিরে গেলাম।
১ ঘন্টা কেটে গেল। আমার সিসিইউ ডা ফোন করে বললেন যে, রোগীর কার্ডিয়াক এ্যারেস্ট হচ্ছে । আমি দৌড় দিয়ে গেলাম। অধ্যাপক বরেণ চক্রবর্তী ওখানে দাঁড়িয়ে । হার্টের/নাড়ীর গতি ৩০ এ নেমে এসেছে, প্রেসার ৫০/৩০।
মৃত্যু আসন্ন! বরেণ স্যার অত্যন্ত নরমভদ্র শান্তস্বভাবের মানুষ। তিনিও রোগীর লোকদের উপর রেগে গেলেন! আরো ১০ মিনিট পরে তাঁরা এ্যানজিওগ্রাম করতে রাজী হলেন।
চেম্বারের রোগীদের অপেক্ষা করতে বলে দ্রুত এ্যানজিওগ্রাম রুমে ( Cathlab) ঢুকলাম। পরিস্থিতি ততক্ষণে অনেক খারাপ হয়ে গেছে।
যাই হোক ক্যাথল্যাব টীমের সকলের সহযোগিতায় দ্রুত গতিতে অস্থায়ী পেসমেকার স্থাপন করে বন্ধ রক্তনালী খুলে দিতে সক্ষম হই। মোট সময় লাগল ২০ মিনিট। মৃত্যুর কূপ থেকে রোগীকে ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হই।
যেটা বলতে চাই তাহল অসুস্থ হলে তো চিকিৎসা নিতে হবে। আর সেটার জন্য চিকিৎসকের উপর আস্থা রাখতে হবে। খারাপ চিকিৎসকও আছে। কিন্তু জরুরী মুহূর্তে সবকিছু যাচাই করতে গেলে রোগীর জীবন বিপন্ন হতে পারে।
প্রায়ই ডাক্তারের বিরুদ্ধে ভুল চিকিৎসার অভিযোগ শোনা যায়। কিন্তু রোগী বা পরিবারের সদস্যদের ভুলের কারণে যে ভুল চিকিৎসা হয় তার দায় কে নিবে?
লেখক:
ডা. মাহবুবুর রহমান,
Senior consultant cardiologist
and CCU Incharge Labaid cardiac hospital Dhanmondi,
Dhaka